'পণ্ডশ্রম' কবিতার আলোকে নিচে কয়েকটি প্রশ্ন দেওয়া হলো। প্রশ্নগুলোর উত্তর প্রস্তুত করো এবং পরে সহপাঠীদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনে নিজের উত্তর সংশোধন করো।
১। 'পণ্ডশ্রম' কবিতায় কীভাবে শ্রম পন্ড হলো?
২। তথ্য যাচাই না করে কাজ করলে তার ফলাফল কী ধরনের হতে পারে বলে তুমি মনে করো?
৩। কোনো তথ্য বা ঘটনার যথার্থতা কীভাবে যাচাই করতে হয়?
'পণ্ডশ্রম' একটি ছড়া-জাতীয় কবিতা। এখানে নিচের বৈশিষ্ট্যগুলো দেখা যায়:
১। 'পণ্ডশ্রম' কবিতায় একটি সামাজিক বিষয়কে ব্যঙ্গার্থকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এই ছড়ার মূল বিষয়- কোনো কিছু ঠিকমতো না যাচাই করে সিদ্ধান্ত নিতে নেই। চোখ দিয়ে দেখে, কান দিয়ে শুনে, বুদ্ধি দিয়ে বিবেচনা করে তবেই কাজে নামতে হয়।
২। এই কবিতায় প্রতি স্তবকের দ্বিতীয় ও চতুর্থ চরণের শেষে মিল রয়েছে। যেমন: চিলে-মিলে, উড়ে-খুঁড়ে ইত্যাদি।
৩। কবিতাটি তালে তালে পড়া যায়। যেমন:
/এই নিয়েছে/ঐ নিল যা
/কান নিয়েছে/চিলে।
/চিলের পিছে ঘুরছি মরে
/আমরা সবাই মিলে।
৪। এই কবিতার তাল অল্প ব্যবধানের এবং এর গতি বা লয় দ্রুত।
৫। কবিতাটিতে শব্দরূপের কিছু পরিবর্তন ঘটেছে। যেমন: নেই—নেইকো, সেখানেই—সেখানটাতেই, নয়- নয়কো ইত্যাদি।
কাজী নজরুল ইসলাম (১৮৯৯-১৯৭৬) বাংলাদেশের জাতীয় কবি। বিদ্রোহী কবি হিসেবেও তিনি পরিচিত। তাঁর কবিতায় অন্যায়, অবিচার, শোষণ ও পরাধীনতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ উচ্চারিত হয়েছে। কবিতা ছাড়াও তিনি গল্প, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ ও অসংখ্য গান রচনা করেছেন। তাঁর বিখ্যাত কয়েকটি বইয়ের নাম 'অগ্নি-বীণা', 'বিষের বাঁশি', 'মৃত্যুক্ষুধা', 'যুগবাণী' ইত্যাদি। নিচের 'সাম্যবাদী' কবিতাটি কাজী নজরুল ইসলামের 'সাম্যবাদী' কবিতার বই থেকে নেওয়া হয়েছে।
কবিতাটি প্রথমে নীরবে পড়ো। পড়ার সময়ে অর্থ বোঝার চেষ্টা করো। এরপর সরবে আবৃত্তি করো।
গাহি সাম্যের গান-
যেখানে আসিয়া এক হয়ে গেছে সব বাধা-ব্যবধান,
যেখানে মিশেছে হিন্দু-বৌদ্ধ-মুসলিম-ক্রিশ্চান।
গাহি সাম্যের গান!
কে তুমি? পার্সি? জৈন? ইহুদি? সাঁওতাল, ভিল, গারো?
কনফুসিয়াস? চার্বাক-চেলা? বলে যাও, বলো আরো!
বন্ধু, যা খুশি হও,
পেটে-পিঠে, কাঁধে-মগজে যা-খুশি পুঁথি ও কেতাব বও,
কোরান-পুরাণ-বেদ-বেদান্ত-বাইবেল-ত্রিপিটক-
জেন্দাবেস্তা-গ্রন্থসাহেব পড়ে যাও যত শখ-
কিন্তু কেন এ পণ্ডশ্রম, মগজে হানিছ শূল?
দোকানে কেন এ দর-কষাকষি?-পথে ফোটে তাজা ফুল!
তোমাতে রয়েছে সকল কেতাব সকল কালের জ্ঞান,
সকল শাস্ত্র খুঁজে পাবে সখা খুলে দেখ নিজ প্রাণ!
তোমাতে রয়েছে সকল ধর্ম, সকল যুগাবতার,
তোমার হৃদয় বিশ্ব-দেউল সকলের দেবতার।
কেন খুঁজে ফের দেবতা-ঠাকুর মৃত-পুঁথি-কঙ্কালে?
হাসিছেন তিনি অমৃত-হিয়ার নিভৃত অন্তরালে।
বন্ধু, বলিনি ঝুট,
এইখানে এসে লুটাইয়া পড়ে সকল রাজমুকুট।
এই হৃদয়ই সে নীলাচল, কাশী, মথুরা, বৃন্দাবন,
বুদ্ধ-গয়া এ, জেরুজালেম এ, মদিনা, কাবা-ভবন,
মসজিদ এই, মন্দির এই, গির্জা এই হৃদয়,
এইখানে বসে ঈসা মুসা পেল সত্যের পরিচয়।
এই রণ-ভূমে বাঁশির কিশোর গাহিলেন মহা-গীতা,
এই মাঠে হলো মেঘের রাখাল নবিরা খোদার মিতা।
এই হৃদয়ের ধ্যান-গুহা মাঝে বসিয়া শাক্যমুনি
ত্যজিল রাজ্য মানবের মহা-বেদনার ডাক শুনি।
এই কন্দরে আরব-দুলাল শুনিতেন আহ্বান,
এইখানে বসি গাহিলেন তিনি কোরানের সাম-গান!
মিথ্যা শুনিনি ভাই,
এই হৃদয়ের চেয়ে বড়ো কোনো মন্দির-কাবা নাই।
আরব-দুলাল: আরব দেশের সন্তান।
ইহুদি: ধর্মসম্প্রদায়ের নাম।
কনফুসিয়াস: চীনা দার্শনিক।
কন্দর: গুহা।
কাশী: হিন্দুদের তীর্থস্থান।
গারো: নৃগোষ্ঠীর নাম।
গ্রন্থসাহেব: শিখ ধর্মাবলম্বীদের ধর্মগ্রন্থ।
চার্বাক: প্রাচীন ভারতের একজন দার্শনিক।
জেন্দাবেস্তা: প্রাচীন ইরানের একটি ধর্মগ্রন্থ।
জৈন: ধর্মসম্প্রদায়ের নাম।
ঝুট: মিথ্যা।
ত্রিপিটক: বৌদ্ধদের ধর্মগ্রন্থ।
দেউল: মন্দির।
নীলাচল: উড়িষ্যার পুরীতে অবস্থিত একটি তীর্থস্থান।
পার্সি: ইরানের অগ্নি-উপাসক একটি সম্প্রদায়।
পুরাণ: হিন্দুধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় কাহিনি সংবলিত গ্রন্থ, যেমন- রামায়ণ, মহাভারত।
বাইবেল: খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মগ্রন্থ।
বুদ্ধ-গয়া: ভারতের বিহার প্রদেশে অবস্থিত বৌদ্ধদের তীর্থস্থান।
বৃন্দাবন: হিন্দুদের তীর্থস্থান।
বেদ-বেদান্ত: হিন্দুদের ধর্মীয় গ্রন্থসমূহ।
ভিল: নৃগোষ্ঠীর নাম।
মথুরা: হিন্দুদের তীর্থস্থান।
মদিনা: সৌদি আরবে অবস্থিত মুসলমানদের পুণ্যভূমি।
যুগাবতার: বিশেষ যুগে জন্মগ্রহণকারী মহাপুরুষ বা অবতার।
শাক্যমুনি: গৌতম বুদ্ধের একটি নাম।
শূল: তীক্ষ্ণমুখ বল্লম বিশেষ।
সাঁওতাল: নৃগোষ্ঠীর নাম।
সাম-গান: সুমধুর বাণী।
সাম্য: সমতা।
সাম্যবাদ: মানুষের সমান অধিকার বিষয়ক মতবাদ।
হানা: বিদ্ধ করা।
আরও দেখুন...